
Ayreen Khan
Ayreen is a visual artist, writer and researcher. Her work portrays visions of spiritual awareness through mystical states, exploring life and asking questions. Her images are vivid, translating themes from world traditions such as Tasawwuf/Sufism, Thangka/Tibetan Buddhist painting, Tantra, Sacred Geometry, and Mandala (Spiritual/ritual symbolism from Abrahamic religions, Hinduism and Buddhism). Ayreen’s work depicts infinite forms within formless time and space, reflecting our life stories and situations. The art points at love, rage, grief, pain, violence, beauty, ugliness, pleasure, separation and unification. Her work has been described as personal journey of healing, awakening, becoming, and unbecoming.
ছেলেবেলায় ঘটে যাওয়া নির্যাতনের প্রভাব কি পরিণত বয়সেও থেকে যায়?
কোন ব্যাক্তি যদি ছেলে বেলায় কোন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয় তবে তার প্রভাব নির্ভর করে নির্যাতনের ধরন ও সেই ব্যাক্তির মানসিক বিকাশে র উপর। মানুষ যখন কোন হিংস্র প্রাণী যেমন বাঘ বা ভাল্লুকের সম্মুখীন হয় তখন সে যেই ধরনের মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যায়, একটি শিশু নির্যাতিত হওয়ার সময় বা কোন বিপদের সম্মুখীন হলে সেই একই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে যায়।মানুষ যখন কোন হিংস্র প্রাণীর সম্মুখীন হয় তখন তার sensory system অর্থাৎ দৃষ্টি , শ্রবণ, ঘ্রাণ,স্পর্শ বা স্বাদ এই সব input device গুলো প্রথমে তার সামনে থাকা বস্তু সম্পর্কে তথ্য গ্রহণ করে । শরীর থেকে এই বার্তা মস্তিষ্কে যায় ব্রেইন স্টেমের (brain step) মাধ্যমে । ব্রেইন স্টেম কি ? আমাদের মেরুদন্ডের সবচাইতে উপরের দিকের অংশ যা মাথার সাথে সংযুক্ত , তাকে ব্রেইনস্টেম বলে । মানুষ তার জিনের (Gene) মধ্য দিয়ে তার পূর্বপুরুষের কাছ থেকে যে তথ্য ও স্মৃতি লাভ করে তা এই অংশে থাকে। সেন্সরিসিস্টেমের পাঠানো তথ্য ব্রেইন স্টেমের মাধ্যমে মস্তিষ্কে বিপদ বার্তা পৌছে দেয়। সাথে সাথে লিম্বিক সিস্টেম (limbic system), যেখানে অনুভূতি প্রক্রিয়া চলে , সে বিপদ সংকেতের বোতাম চেপে দেয়। লিম্বিক সিস্টেম ব্রেইনের মধ্য অংশ। হাইপো থালামাস (hypothalamus), যা মস্তিষ্কে খুব ছোট্ট একটা অংশ ও এড্রি নাল গ্ল্যান্ড (adrenal gland), যা শরীরে বৃক্ক বা
Kidney র উপরে অবস্থিত, একসাথে কাজ করে শরীরে স্ট্রেস হরমোন (stress hormone) ছড়াতে থাকে । এর ফলে শরীরে রক্ত চলাচল বেড়ে যায় ও ইলেকট্রন প্রবাহ অতিমাত্রায় হতে থাকে । শরীরের পেশী গুলো সংকুচিত হয়ে আসে এবং শরীরে প্রচুর অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং শরীর ঘামতে থাকে ।
শিশু নির্যাতনের মানসিক প্রভাব
- মানুষের মস্তিষ্কে ডোপেমিন নামেনিউরো ট্রান্সমিটিংরা সায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যা মানুষকে খুশিখুশি রাখতে সাহায্য করে । শিশু নির্যাতনের কারণে মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে তার ডোপেমিন গ্রহণ করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে সে আগ্রহ, উদ্দীপনা হারায় বা উচ্ছ্বসিত থাকতে পারেনা ।
- খেলাধুলায় অনাগ্রহ, লেখাপড়ায় অমনোযোগীতা , খাবারে অরুচি , অনিহা , অনিদ্রা এইসব সাধারণ উপসর্গ।
- হিপোক্যাম্পাস (hypocampus) যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের নানান স্মৃতি ধারণ করে ,যেমন চাবি কোথায় রাখলেন, কারো নাম, বা নতুন কোন তথ্য , তা দ্রুত বার্ধক্য লাভ করে । ফলে মানুষ স্মৃতি হারাতে থাকে তাড়াতাড়ি । তবে সেটা যে কোন ধরনের প্রলম্বিত মানসিক চাপের মধ্যে থাকলেও হতে পারে ।
- ভয়, অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা , নিজের ব্যপারে হীনমন্যতায় ভোগা
- নেতিবাচক মানসিকতা সৃষ্টি হওয়া
- সামান্য ব্যপারে অশান্তি , উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা গ্রস্ত হয়ে পরা
- মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে অপারগতা
শিশু নির্যাতনের মানসিক প্রভাব
- ওজন কমা বা বেড়ে যাওয়া
- ডায়াবেটিকস রোগের আশঙ্কা
- নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠলে তার হৃদরোগের সম্ভাবনা অন্য যে কারো চাইতে ৩ গুন বেশি হয়
- শ্বাসকষ্ট
- অনিদ্রা , মাথা ব্যথা ,
- থাইরয়েড সমস্যা
সামাজিক প্রভাব
- রাগ, বদমেজাজ ও প্রতিহিংসাপরায়নতা
- বন্ধুত্ব পরায়ন কিংবা সামাজিকতায় অনীহা
- নিজেও নির্যাতক হয়ে উঠতে পারে
- অপরকে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করা
- অন্যকে অবিশ্বাস করা
- নিকট সম্পর্কগুলোর মাঝে ভারসাম্য রেখে চলতে না পারা
শারীরিক প্রভাব সামাজিক প্রভাব সন্তানকে ঘরেবন্দি করে রেখে নিরাপদ রাখা সম্ভব নয়। শিশু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের কোন সদস্য দ্বারা বাড়ি তে বা যেই পরিবেশ শিশুর জন্য নিরাপদ মনে করা হয়, সেখানেই নির্যাতিত হয়। বরং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আপনার সন্তানকে প্রস্তুত করুন কোন প্রতিকূল পরিবেশে কিভাবে নিজেকে নিরাপদ রাখবে । আর যারা শিশু নির্যাতনের বিভিন্ন প্রভাব নিয়ে বেড়ে উঠেছেন, এখনো সময় আছে এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করার। সহজ নয়। তবে অসম্ভবও না ।
মানসিক চাপ কেন ক্ষতিকর?
সকল যুগেযুগে, সমাজেও সভ্যতায় নানান পরিসরে মানুষ বিভিন্ন রকমের মানসিকচাপের মধ্য দিয়ে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে এসেছে । স্ট্যানফোর্ড মেডিসিনের প্রফেসর ডঃ মারিয়া জুরেজুরেস- রেয়াসের মতে দৈনন্দিন জীবনে নানান প্রত্যাশা বা চাহিদার প্রতিক্রিয়া হিসেবে মস্তিষ্কে যে অনিশ্চয়তা তৈরী হয় তা কে মানসিক চাপ বলে । এই চাপ শরীর ও মনে নানান নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে । দীর্ঘ সময় ধরে কেউ মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে শরীরে নানান রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে । শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, ডায়াবেটিকস, হরমোনজনিত রোগ, মেদ বা ওজন কমে যাওয়া , খাবারে অরুচী বা অতিরিক্ত রুচি , অনিদ্রা , স্মৃতিলোপ, মানসিক অস্থিরতা এমন নানান শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয় মানসিক চাপ থেকে ।
মানসিক চাপের যে সুত্রপাত, মানসিক অনিশ্চয়তা , তা তৈরী হয় কিভাবে ? অনিশ্চয়তা আসে যে কোন ধরনের চাহিদা পূরপূণের আকাঙ্ক্ষা থেকে । আমরা অনেক সময় এমন অনেক ঘটনা বা পরিস্থিতির সম্মুখীন হই যখন আমাদের মস্তিষ্ক বুঝতে পারে না তার প্রতিক্রিয়া কেমন হওয়া উচি ৎ। আবার মানুষের যখন কোন কিছুর প্রতি চাহিদা বোধ হয়, তা পুরনের বিভিন্ন নিয়ামকের উপর তার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তখন সে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগে । নিরাপত্তা হীনতায় মানুষের মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করবে তার জ্ঞান মানুষ লাভ করে তার পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে ।
প্রাচীনকালে মানুষের জীবনের উপর সবচাইতে বড় হুমকি ছিল হিংস্র পশুর আক্রমণ। এই কারণে মানুষ দলবদ্ধভাবে থাকা শুরু করে । মানুষ যখন হিংস্র প্রাণীর সম্মুখীন হয় তখন মানুষের মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে ?
সেন্সরি সিস্টেমের পাঠানো তথ্য ব্রেইন স্টেমের মাধ্যমে মস্তিষ্কে বিপদ বার্তা পৌছনোর সাথে সাথে লিম্বিক সিস্টেম (limbic system), যেখানে অনুভূতি প্রক্রিয়া চলে , সে খানে বিপদ সংকেতের বোতাম চেপে দেয়। লিম্বিক সিস্টেম ব্রেইনের মধ্য অংশ। হাইপোথালামাস (hypothalamus), যা মস্তিষ্কের খুব ছোট্ট একটা অংশ ও এড্রিনাল গ্ল্যান্ড (adrenal gland), যা শরীরে বৃক্ক বা Kidney র উপরে অবস্থিত, একসাথে কাজ করে শরীরে স্ট্রেস হরমোন (stress hormone) ছড়াতে থাকে । যার ফলে মানসিক চাপে অনেক সময় কোমরে ব্যথা হয়। এর ফলস্বরূপ শরীরে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়, ইলেকট্রন প্রবাহ অতিমাত্রায় হতে থাকে , শরীরের পেশী গুলো সংকুচিত হয়ে আসে এবং শরীরে প্রচুর অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং শরীর ঘামতে থাকে ।
মানুষের মনে যখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, কেবল হিংস্র প্রাণীর সামনে পরলেই নয়, যেকোন ধরনের ভয় বা নিরাপত্তাহীনতা বোধে মানুষের মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়া উপরে উল্ল্যেখিত এই উপায়ে হয়। বিপদে পরলে মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করবে তা আমাদের রিপ্টিলিয়ান ব্রেইন তার পূর্বপুরুপুষের কাছ থেকে শিখেছে । চুরি , ডাকাতি , যানজট, পারিবারিক সহিংসতা কিংবা শিশু নির্যাতনসহ যে কোন অনিশ্চয়তা বা বিপদেই মানুষের মস্তিষ্ক ও শরীর এই প্রক্রিয়ায় কাজ করে ।
অর্থাৎ মানসিক চাপে শরীর ও মস্তিষ্কের জটিল প্রক্রিয়ার ফলে স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সুস্বাস্থ কেবল সুস্থসু শরীর নয়, সুস্থসুমস্তিষ্ক নিয়েও মানসিকচাপের এই প্রভাবগুলো তৎক্ষণাৎ ভাবে প্রতিয়মান না হলেও এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কেবল সেই ব্যক্তির জন্যই ক্ষতিকারক হয় না , তার ভ্রূণের মধ্য দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মে ও ছড়িয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপের মধ্যে থাকা মানুষের ব্যবহার, আচরণ ও প্রতিক্রিয়ার নেতিবাচক প্রভাবে পরিবার, সমাজ বা কর্মক্ষেত্রে অন্যরাও প্রভাবিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে । মানসিক চাপের এই সুক্ষসু প্রক্রিয়া বা প্রভাব আমাদের সচেতনতার বাইরে হলেও এই প্রক্রিয়া সারাক্ষণ আমাদের ভিতরেই হচ্ছে । এর প্রভাবে আমরা অশান্তি বা অস্বস্তি বোধ করি । তাই যেখানে , যেই কাজে বা যার সাথে মন বা মস্তিষ্ক অস্বস্তি অনুভূতির সংকেত দিবে , তখন তা আমলে নিতে হবে । নিজেকে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত করতে হবে । নিজে ভালো না থাকলে কখনই অন্যকে ভালো রাখা যায় না । তাই হাসতে থাকুন, সুস্থ থাকুন। মানসিক চাপের নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন।